ঘটনা ১- সময়টা ছিল ২০১০ সাল। কোরবানির ঈদের পরদিন করে খুব সকালে হঠাৎ মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।এমন একটি সংবাদ শুনতে পেলাম যেটা শুনে ঐমুহুর্তে আমি বিছানা থেকে উঠে দাড়ানোর শক্তি পাচ্ছিলাম না।আমার খুব কাছের একজন মানুষ পাশাপাশি মানুষটি আমার বাবার কলিগ এবং আমার প্রিয় বন্ধুর মা সে কিনা আত্মহত্যা করেছে!
ঘটনা ২- হিমি আপু (ছদ্মনাম)একজন পরিপাটি মানুষ।আমাদের ছোটো মফস্বল শহরে খুব কম মেয়েকে আধুনিক পোশাক সুন্দরভাবে ক্যারি করতে দেখেছি।এলাকায় অনেকে তার স্বাভাবিক চলাচল নিয়ে কথা শুনালেও সে অন্যের কথায় কান না দিয়ে নিজের পছন্দ আর রুচিবোধ সবসময় ধরে রেখেছিল।আপু এবং আমি একসাথে ইংরেজি পড়তাম স্কুলের একজন শিক্ষকের কাছে।একদিন টিউশন টাইমে খবর এলো আপু সুইসাইড করেছেন।
ঘটনা ৩- খোকন আঙ্কেল আমার পরিবারিক ডাক্তার ছিলেন। ছোটবেলায় অসুখ বিসুখে খুব আক্রান্ত হতাম বলে উনার সাথে আমার দেখা সাক্ষাত প্রায়ই হতো।আমি যখন কলেজে পড়ি তখন আঙ্কেলের বয়স ৫৯/৬০ হবে।একদিন বাসায় একটি ফোন এলো। আমরা জানতে পেলাম আঙ্কেল সুইসাইড করেছেন।
উপরের তিনটি ঘটনা ঘটেছে আমার কৈশোর জীবনে।আমাকে মানসিকভাবে এই তিনটি ঘটনা খুব নাড়া দিয়ে গিয়েছিলো।আমি একা একা ভাবতাম তারা কেনো এমনটা করলো?মানুষগুলোর তো কোনো অভাব নেই তবুও কেনো?কেউ কেন দেখলো না মানুষগুলো নিজেদেরকে শেষ করে দিতে যাচ্ছেন?একটা মানুষ কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে যা থেকে একমাত্র মৃত্যুই পারে শান্তি দিতে?আমার মাথায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো।বারবার মানুষকে জানার, বোঝার এবং সাহায্য করাতে চাওয়ার আগ্রহ যেনো ক্রমেই বেড়ে চলছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়াশোনার সময় আমি জানতে পারলাম কান পেতে রই সম্পর্কে।আমার অতীত জীবনের স্মৃতি কান পেতে রই’তে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার আগ্রহী করে তোলে।কান পেতে রই’তে ট্রেইনিং করার সময় আমার আচরণের নানা ত্রুটি, জাজমেন্টাল মনোভাব যেগুলো অন্য কাউকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে তা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ক্রমাগত ট্রেনিং এর মাধ্যমে আমার ব্যাবহারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।এটি আমাকে আগের চেয়ে আরো বেশি সহনশীল, এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
কান পেতে রই এমন একটি জায়গা যা আমাকে মানুষের সুখ-দুঃখ, হাঁসি-কান্না,বেদনা-আনন্দ, চাওয়া-না চাওয়া ইত্যাদি নানা বিষয়ে মানুষের কথা শোনার এবং বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে।পাশে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে সেইসব মানুষের যারা জীবনটাকে চায় আরেকটু সুন্দর করতে।মানুষকে নিয়ে আমার মনে যেসব প্রশ্ন বারবার জাগতো তার উত্তর এখানে কাজ করতে এসে পেয়েছি।একটা মানুষ জীবনে যেসব সিদ্ধান্ত নেয় তার পেছনে নানা গল্প, চরিত্র লুকিয়ে থাকে।কান পেতে রই’তে কাজ করতে না আসলে কখনো মানুষের জীবনের নানা বৈচিত্র্যতা সম্পর্কে কখনো জানতে পারতাম না।
কান পেতে রই আমার কাছে আমার পরিবার। এখানকার প্রত্যেকটি সদস্য যেভাবে নির্মল ভালোবাসা প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে তা জীবনে পরম পাওয়া।দীর্ঘজীবি হোক “কান পেতে রই”।♥️
অন্তু